শুক্রবার, ২৭ Jun ২০২৫, ০৬:১৮ অপরাহ্ন
ভয়েস নিউজ ডেস্ক:
কোরবানির ঈদের আগে চট্টগ্রাম নগরীর অন্যতম চালের বাজার পাহাড়তলী বাজারে পাইকারিতে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) জিরাশাইল সিদ্ধ চাল বিক্রি হয়েছিল ৩ হাজার ৪০০ টাকা। ঈদের পর এখন সেই চাল প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৭০০ টাকা। এই হিসাবে বস্তাপ্রতি জিরাশাইল সিদ্ধ চালের দাম বেড়েছে ৩০০ টাকা। কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ৬ টাকা।
শুধু জিরাশাইল সিদ্ধ নয়, বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঈদের পর বাজারে সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। দুই-তিনটি কারণে এখন বাজারে চালের দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন পাহাড়তলী বাজারের ব্যবসায়ীরা।
তারা বলছেন, ধান সংকটের অজুহাতে মিল পর্যায়ে এখন চালের দাম বাড়তি। তাই বাজারে চালের দাম বাড়ছে। এ ছাড়া ঈদের লম্বা ছুটিতে পরিবহন খরচ বেড়েছে। ট্রাকপ্রতি ভাড়া ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা বেড়ে যায়, যার প্রভাব পড়েছে চালের বাজারে। এসব কারণে পাইকারিতে বাড়ছে চালের দাম।
পাহাড়তলী বাজারের আজমির স্টোরের মালিক নিজাম উদ্দিন বলেন, তিন কারণে এখন বাজারে চালের দাম বাড়ছে। প্রথমত ঈদের লম্বা ছুটিতে গাড়ি ভাড়া বেড়েছে। ট্রাকপ্রতি ভাড়া ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা বেড়ে যায়, যার প্রভাব পড়েছে চালের বাজারে। অন্যদিকে সরকার মিল মালিকদের কাছ থেকে চাল সংগ্রহ করতেছে, যে কারণে মিল থেকে এখন বাজারে চালের সরবরাহ কমেছে। এ ছাড়া মিল মালিকরা বলছেন, বাজারে ধানের সরবরাহ কম। তাই ধানের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে মিল পর্যায়ে চালের দাম বেড়েছে। যার প্রভাব পড়েছে পাইকারি বাজারে।
পাহাড়তলী চালের পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোরবানির ঈদের পর বাজারে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) চালের দাম ১০০ থেকে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ঈদের আগে পাহাড়তলী বাজারে পাইকারিতে প্রতি বস্তা মোটা সিদ্ধ চাল বিক্রি হয়েছিল ২ হাজার ২৫০ টাকা সেটি এখন বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৩৫০ টাকায়। গুটি স্বর্ণা সিদ্ধ চাল প্রতি বস্তা বিক্রি হয়েছিল ২ হাজার ৫০০ টাকা, ওই চাল এখন প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৮০০ টাকায়। নুরজাহান স্বর্ণা প্রতি বস্তা বিক্রি হয়েছিল ২ হাজার ৭৫০ টাকা, সেটি এখন বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৯০০ টাকায়। মিনিকেট সিদ্ধ বিক্রি হয়েছিল ২ হাজার ৭০০ টাকা, সেটি এখন ২ হাজার ৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জিরাশাইল সিদ্ধ প্রতি বস্তা ঈদের আগে বিক্রি হয়েছিল ৩ হাজার ৪০০ টাকা, সেটি এখন বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৭০০ টাকা।
অন্যদিকে ঈদের আগে বেতি আতপ প্রতি বস্তা বিক্রি হয়েছিল ২ হাজার ৭০০ টাকা, সেটি এখন বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৯০০ টাকা। কাটারি আতপ যেটি ছিল ৩ হাজার ৪০০ টাকা, সেটি এখন বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৮০০ টাকায়। পাইজাম আতপ প্রতি বস্তা বিক্রি হয়েছিল ২ হাজার ৭০০ টাকায়, এখন বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৯০০ টাকা। মিনিকেট আতপ প্রতি বস্তা বিক্রি হয়েছিল ২ হাজার ৯০০ টাকায়, সেটি এখন বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ২০০ টাকায়।
বাজারে চালের দাম এভাবে বেড়ে যাওয়ার পেছনে পাহাড়তলী বাজারের ব্যবসায়ীরা মিল পর্যায়ে দাম বৃদ্ধিকে প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করলেও মিল মালিকরা বলছেন, এখন চালের দাম বৃদ্ধির পেছনে ধানের দাম বেড়ে যাওয়াটাই মূল কারণ।
পাহাড়তলী বাজারে চালের আড়তে মিনিকেট চাল সরবরাহ করেন কুমিল্লার বুড়িচংয়ের সোনার বাংলা অ্যাগ্রো ফুড কোম্পানি লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির মালিক মো. আব্দুল সাত্তার বলেন, ‘বাজারে এখন ধানের সরবরাহ কম। তাই ধানের দাম বেড়েছে। আগে যেখানে আমরা প্রতি মণ ধান কিনতাম ১৪০০ থেকে ১৪৫০ টাকা দিয়ে, সেখানে এখন মণপ্রতি ধানের দাম পড়ছে ১৬০০ টাকা। ধানের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণেই চালের দাম বেড়েছে।
দিনাজপুর খাদ্য ভান্ডার, সাহা ব্রাদার্সের মালিক মো. প্রশান্ত সাহা বলেন, ‘আবহাওয়া খারাপ হওয়ায় এখন বাজারে ধানের আমদানি কমেছে, তাই মিলে চাল উৎপাদন কম হচ্ছে। হাটে সরবরাহ কমে যাওয়ায় ধানের দামও বাড়ছে। তাই চালের দাম এখন বাড়ছে।’
ভয়েস/জেইউ।